১৩ বছরের ছোট্ট একটি মেয়ে নাম লামিয়া
তাবাসসুম তুবা। নামের মতোই কিউট ছিলো ছোট্ট মেয়েটি। আর মুখে লেগে থাকতো
অসম্ভব সুন্দর হাসি। আর পড়া লেখা সেটা ক্যাডেট কলেজের সবারি জানা। হ্যাঁ,
সেই ছোট্ট মেয়েটি পড়তো ফেনী ক্যাডেট কলেজের অষ্টম শ্রেণীতে।
যে কিনা প্রতিটি পরিক্ষায় ৯০ এর উপর
নাম্বার পেয়ে বিগত ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছিলো। শুধু লেখা পড়াই না
খেলাধুলার দিক দিয়েও কলেজের সিনিয়রদের থেকেও এগিয়ে ছিলো। বাবা মা দুজনেই
ছিলো কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক।
মেয়ের এইসব প্রতিভার জন্য তারা তুবাকে নিয়ে
গর্ব করতো । কিন্তু তুবাকে নিয়ে বাবা মায়ের সেই গর্ব করার সময়কাল টা
বেশিদিন টিকলো না। কেননা গত ২২শে মার্চ মঙ্গলবার সকালে তুবার লাশ পাওয়া যায়
ক্যাডেট কলেজের বাথরুমে ঝুলন্ত অবস্থায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘটনাকে সুইসাইড
বলে প্রচার করেছিলো ।কিন্তু প্রশ্ন হলো তুবা সুইসাইড কেনো করবে? কি ক্ষোভ
ছিলো তার মনে ?
সত্যটা হলো ক্ষোভ তার মনে ছিলো না, ক্ষোভ
ছিলো তার সহপাঠী ও তার সিনিয়রদের মনে। কারন এতো অল্প বয়সে তুবার প্রতিভা
তারা মেনে নিতে পারে নি। তুবা প্রায়ই তার বাবা মা কে বলতো তার উপর
সিনিয়রদের টর্চারের কথা। বাবা মা তাকে বুঝাতেন কেননা তারাই নিজেরাই জানতেন
ক্যাডেট কলেজ নামক ‘কারাগারের’ ভিতরের কৃতকর্ম । দুইজনে ক্যাডেটের শিক্ষক
হওয়াতে মেয়ের জন্য কলেজের কর্তৃপক্ষ কাছে অভিযোগ করার পথ ছিলো না। আশায়
ছিলেন হয়তো একদিন ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো তাদের আদরের তুবা সব সহ্য করে ঠিক হয়ে
যাবে। কিন্তু সেই আশা যে নিরাশা হয়ে যাবে তা কে জানতো?
সব শেষ হয়ে গেলেও সেদিনের কলেজ কর্তৃপক্ষের
কয়েকটি অবহেলার জন্য আজও মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সেদিন তুবা কি আসলে
সুইসাইড করেছিলো নাকি তাঁকে টর্চারে মেরে ফেলা হয়েছিলো ।
১) ঘটনার দিন সকাল বেলায় কলেজ কর্তৃপক্ষ
ফোনে তুবার বাবা মাকে তুবার অসুস্থের কথা বলে ডেকে পাঠায় এবং তারা আসার পর
কর্তৃপক্ষ তাদের মেয়েকে কেনো আগে দেখতে না দিয়ে তাদের সামনে একটি পেপার
দিয়ে ওটাতে সাইন করতে বলে যেখানে তুবার সুইসাইডের কথা লেখা ছিলো ।
২) তুবার বাবা-মা এর অনমুতি ছাড়া পুলিশ লাশ
নামিয়ে মর্গে নিয়ে যায় সেখান থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্বহত্যা বলে
পরিবার কে জানানো হয়। কিন্তু তুবার শরীর ও হাতে বিভিন্ন আঘাতের চিনহ পাওয়া
যায়।
৩)ঘটনার দিন তুবার মা যখন দৌড়ে কলেজের
তুবার রুমে গেলো সেখানে তুবার ব্যবহৃত জিনিশপত্র এমনকি তুবার ব্যাক্তিগত
ডাইরি টি কেনো খুজে পায়নি।
৪) সেদিন তুবার বাবা মায়ের সাথে কলেজের
ছাত্রীদের সাথে কেনো কথা বলতে দেয়া হয়নি। ক্যাডেট কলেজ কতৃপক্ষ পরিবারকে
কোন তথ্য না দিয়ে হোস্টেল বন্ধ দিয়ে দেন এবং কারো সাথে দেখা করার বা কোন
তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
৫) তুবা যদি ফাঁশি দিয়েই থাকে তাহলে কেনো তার হাতের চারটা নখ এ রক্তজমাট বাধা ছিলো।
6) এমনকি যারা তুবাকে গোসল করেছিলো তাদের ভাষ্যমতে তুবার কোমরের নিছে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিলো ।
এসব অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর ছাড়াই সেদিন
বাবা মা আত্মীয় স্বজনরা ছোট্ট মেধাবী তুবাকে আজীবনের জন্য কবরে রেখে দিলো।
আজকে হয়তো বাবা মা দুজনেই ক্যাডেট কলেজের টিচার হবার কারনে তাদেরকে
মুখবন্ধ করে থাকতে হচ্ছে এবং অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ।
বাইরের দিক থেকে সেরা প্রতিষ্ঠান মনে হওয়ায়
অনেকে ছেলে মেয়ের সপ্ন থাকে ক্যাডেট এ পড়ার, কিন্তু বাস্তবে সেখানে যে
বাচ্ছাদের কি অমানসিক নির্যাতনের ভেতর কাটাতে হয় তা কল্পনা করার মতো নয়।
আজকে তুবার বাবা মার পক্ষে সম্ভব হবে না একা তুবার জন্য লড়াই করে আসল রহস্য
বের করার। আমি বা আমরা কেউই চাই না ভবিষ্যতে আর কোন তুবার এমন মৃত্যু হোক।
তাই দেশের সকল বিবেকবানদের কাছে অনুরোধ রইলো আমরা কি চাইনা দোষী
ব্যাক্তিদের বিচার হোক। তারাই যতই ক্ষমতাশীল হোক না কেনো তারা কি শাস্তি
পাবে না?? এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ তদন্ত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন