টাইমস্কেল
ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন পে-স্কেলের এক মাস
পেরিয়ে গেলো।টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে প্রতি বছর সরকারি
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাঁচ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পুরনো পদ্ধতি টাইমস্কেল ও
সিলেকশন গ্রেড বহাল থাকলেই চাকরিজীবীরা লাভবান হবেন। এ কারণে নতুন বেতন
কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে নতুন যে সুবিধার ঘোষণা দেয়া
হয়েছে তা চ্যালেঞ্জ করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সচিবালয় সরকারি
কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। চলতি সপ্তাহে প্রতিবেদনটি সরকারের গঠিত
বেতন বৈষম্য দূরীকরণ কমিটির কাছে জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে হিসাব করে
দেখানো হয়, দীর্ঘমেয়াদে একজন চাকরিজীবী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডেই
লাভবান হবেন। খবর যুগান্তরের।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের
প্রতিবেদনে অষ্টম বেতন কাঠামোর ২০টি গ্রেডের সুবিধা আগামী ২০৩০ সাল
পর্যন্ত পর্যালোচনা করা হয়। এতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে পাঁচ
শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধিতে ক্ষতি এবং ওই দুটি সুবিধা বহাল রাখা হলে লাভের
বিষয়টি পাশাপাশি হিসাব করে দেখানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও
কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব জাকারিয়া বলেন, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ
কমিটিকে হিসাবসহ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আমরা যে হিসাব দিয়েছি অর্থমন্ত্রী
সে হিসাব যাচাই করে দেখতে পারেন। অর্থমন্ত্রীর সুবিধার জন্যই আমরা এসব তথ্য
প্রদান করেছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমরা সাক্ষাতের সময় চেয়েছি
মন্ত্রীর কাছে। এখন কমিটি এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে পারবে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নতুন পে-স্কেলে বছরে পাঁচ শতাংশ হারে বেতন
বৃদ্ধিতে ২০৩০ সালে গিয়ে সর্বনিম্ন গ্রেডের (২০) একজন কর্মচারীর বেতন ৮২৫০
টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ১৫১ টাকা। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড ও টাইম
স্কেল বহাল রাখা হলে কোনো পদোন্নতি ছাড়াই একই সময়ে সর্বনিম্ন গ্রেডের
কর্মচারীর বেতন দাঁড়াবে ২৪ হাজার ৭৬৩ টাকা।
একইভাবে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী ২০৩০
সালে গ্রেড-২-এর বেতন হবে এক লাখ ১৪ হাজার ৬৪৮ টাকা, গ্রেড-৩-এর বেতন হবে ১
লাখ ১৭৫৩ টাকা, গ্রেড-৪-এর বেতন ৯০ হাজার ৪৭ টাকা, গ্রেড-৫-এর বেতন হবে ৮৩
হাজার ২১৭ টাকা, গ্রেড-৬-এর বেতন হবে ৭৩ হাজার ৮০২ টাকা, গ্রেড-৭-এর বেতন
হবে ৬০ হাজার ২৮৯ টাকা, গ্রেড-৮-এর বেতন হবে ৪৭ হাজার ৮১৫ টাকা, গ্রেড-৯-এর
বেতন হবে ৪৫ হাজার ৭৩৬ টাকা, গ্রেড-১০-এর বেতন ৩৩ হাজার ২৬৩ টাকা,
গ্রেড-১১-এর বেতন ২৫ হাজার ৯৮৭ টাকা, গ্রেড-১২-এর বেতন ২৩ হাজার ৪৯২ টাকা,
গ্রেড-১৩-এর বেতন ২২ হাজার ৮৬৮ টাকা, গ্রেড-১৪-এর বেতন ২১ হাজার ২০৫ টাকা,
গ্রেড-১৫-এর বেতন ২০ হাজার ১৬৬ টাকা, গ্রেড-১৬-এর বেতন ১৯ হাজার ৩৩৪ টাকা,
গ্রেড-১৭-এর বেতন ১৮ হাজার ৭১০ টাকা, গ্রেড-১৮-এর বেতন ১৮ হাজার ২৯৫ টাকা
এবং গ্রেড-১৯-এর বেতন হবে ১৭ হাজার ৬৭১ টাকা।
পাশাপাশি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড
সুবিধা বহাল থাকলে এবং ২০৩০ সালে গ্রেড-৯-এর বেতন হবে ৫৯ হাজার ৯৩০ টাকা,
গ্রেড-১০-এর বেতন হবে ৪০ হাজার ৮০৬ টাকা, গ্রেড-১৯-এর বেতন হবে ১৯ হাজার
৩৩৪ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও একটি হিসাবে দেখানো হয়
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে নিয়মিত পে-স্কেল
প্রদান করা হলে গ্রেড-২-এর বেতন হবে এক লাখ ৯৩ হাজার ৪১৪ টাকা, গ্রেড-৩-এর
বেতন হবে এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৩ টাকা, গ্রেড-৪-এর বেতন এক লাখ ৪৭ হাজার ২৩৩
টাকা, গ্রেড-৫-এর বেতন হবে এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪১ টাকা, গ্রেড-৬-এর বেতন এক
লাখ ৬৫৫৫ টাকা, গ্রেড-৭-এর বেতন ৮৭ হাজার ৪৫ টাকা, গ্রেড-৮-এর বেতন ৬৯
হাজার ৩৬ টাকা, গ্রেড-৯-এর বেতন ৬৬ হাজার ৩৪ টাকা, গ্রেড-১০-এর বেতন ৪৮
হাজার ২৫ টাকা, গ্রেড-১১-এর বেতন ৩৭ হাজার ৫১৯ টাকা, গ্রেড-১২-এর বেতন ৩৩
হাজার ৯১৮ টাকা, গ্রেড-১৩-এর বেতন ৩৩ হাজার ১৭ টাকা, গ্রেড-১৪-এর বেতন ৩০
হাজার ৬১৬ টাকা, গ্রেড-১৫-এর বেতন ২৯ হাজার ১১৫ টাকা, গ্রেড-১৬-এর বেতন ২৭
হাজার ৯১৪ টাকা, গ্রেড-১৭-এর বেতন ২৭ হাজার ১৪ টাকা, গ্রেড-১৮-এর বেতন ২৬
হাজার ৪১৪ টাকা এবং গ্রেড-১৯-এর বেতন হবে ২৫ হাজার ৫১৩ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অষ্টম বেতন কাঠামোতে
গড়ে ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেতন বাড়লেও সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেয়ার
কারণে তা অধিকাংশ চাকরিজীবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এতে আরও বলা হয়,
বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের কোনো সম্পর্ক
নেই। চাকরিতে পদোন্নতি একটি সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু অনেক সময় চাকরির ধরন
ও প্রতিষ্ঠানের কাঠামো অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদান সম্ভব হয় না। এ কারণেই
মূলত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রবর্তন করা হয়।
বিশেষ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষকগণ, ড্রাইভার, পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীসহ
অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু বিগত সব
পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল সুবিধা বহাল থাকলেও বর্তমানে তা
বাতিল করা হয়েছে।