একজন রোগী জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে প্রতি মাসে তাঁর ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
বাংলাদেশের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের জরিপ অনুযায়ী দেশটির প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত, যদিও চিকিৎসকরা বলছেন এর চিকিৎসাও এখন বাংলাদেশে সহজলভ্য।
আক্রান্তরা বলছেন চিকিৎসা থাকলেও সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ট্যাক্স কমানো ও দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থাসহ সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলে কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যয় অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিভাগের ডায়ালাইসিস সেন্টারে একজন রোগী জানান ছয় মাস ধরে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেছন তিনি।
এই রোগীর সঙ্গে থাকা তাঁর সন্তান জানান, চিকিৎসার জন্যে প্রতি মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে তাদের।
কেউ কেউ আবার খরচ কমাতে রোগীকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করান। শুধু ডায়ালাইসিসি করানোর জন্যে নির্ধারিত দিনে হাসপাতালে আনেন রোগীকে।
তেমনই একজন রাহেলা বেগম। তিনিও জানান ডায়ালাইসিস, ঔষধ, আনা নেয়ার খরচ-সব মিলিয়ে মাসে তাঁর ব্যয় ৩০-৪০ হাজার টাকা।
কিন্তু বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা এতো ব্যয়বহুল কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম সেলিম বলেন, "একটা ডায়ালাইসিসি মেশিনের দাম দশ লাখ টাকা। এছাড়া প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বিদেশ থেকে আনা"।
সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দিলে ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কিন্তু কিডনির সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সেবা কি পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে? কিডনি সংযোজনের ক্ষেত্রে কতটা সফল হচ্ছে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা?
জবাবে অধ্যাপক সেলিম বলেন কিডনি সংযোজন হয় বাংলাদেশে বারটি সেন্টারে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এ পর্যন্ত ৪৭৮ জনের কিডনি সংযোজন করা হয়েছে।
তবে রোগীদের জন্যে সহায়তার ব্যবস্থাও করেছে কিডনি ফাউন্ডেশন ও বারডেমের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান।
বারডেম হাসপাতালের পরিচালক শহীদুল হক মল্লিক বলছেন প্রয়োজন হলে রোগীদের সহায়তার ব্যবস্থা হাসপাতাল থেকেই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গড়ে ১৮ হাজার জনের ডায়ালাইসিস হয় বারডেমে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতি বছর শুধুমাত্র তাদের হাসপাতালেই গড়ে ৫০ হাজার রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
কিন্তু বাংলাদেশে এতো মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কি?
অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল আর কিডনি ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রতি সাত জনে একজন কিডনি রোগী।
ডায়াবেটিস রোগীর ৩০/৪০ শতাংশ আর উচ্চ রক্তচাপে যারা ভুগছেন তাদের ১৮/২০ শতাংশ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
তিনি বলেন কিডনি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন সবাই সচেতন হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সূত্র: বিবিসি
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন