বেশ কিছুদিন ধরেই স্বামীকে সন্দেহ করতেন ওই সৌদি মহিলা। তাঁর অনুপস্থিতিতে স্বামী কী করেন তা জানতেই তিনি বাড়িতে গোপন ক্যামেরা লাগান। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি বাড়ির এক পরিচারিকার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করছেন। পরিচারিকাও অস্বস্তি এড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন স্বামীকে শায়েস্তা করতে ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করে সোশাল সাইটে ছেড়ে দেন ওই মহিলা। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। কিন্তু, এই অপরাধে যে উল্টো মহিলারই হাজতবাস হতে পারে, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন সৌদি আরবের আইনজীবীরা।
সৌদি আরবের পুরুষদের অনেকেরই এধরনের ব্যভিচারের খাসিলত পুরোনো। এটা আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নাম বয়ে আনছে দেশটির জন্যে। সম্প্রতি ভারতে সৌদি রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে নেপালি দুই মহিলাকে জোর করে আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে পাঠান। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এধরনের অভিযোগ বরাবরের মতই অস্বীকার করা হয়।
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, ইউরোপ আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে প্রায়শঃ সৌদি নাগরিকরা যৌন হয়রানির জন্যে বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। আবার সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্যদের রক্ষা কবচ হিসেবে একধরনের সুরক্ষা পরিচয় পত্র রয়েছে যা দেখালে এধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে আইনগত ঝামেলা এড়িয়ে মুক্তি পেতে পারেন তারা। পরিস্থিত এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া সহ অনেক দেশই আর সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। সৌদি নারীদেরও এজন্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ইদানিং সৌদি আরবের অভিযোগ বাংলাদেশ থেকে গৃহপরিচারিকা পাঠানো হচ্ছে না। যে কয়েকজন গিয়েছেন তাদের অনেকের কাছে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির অভিযোগ শুনে অনেকেই আর সৌদি আরব যেতে চান না গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতে।
যেখানে সৌদি নারীরাই স্বামীদের ব্যভিচারের দৃশ্য হাতে নাতে ধরিয়ে দিলে আইন তার বিপক্ষে যায় সেখানে বিদেশি গৃহপরিচারিকা যারা দুটো পয়সার জন্যে খুবই কম বেতনে দুটো পেটভাতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে যেয়ে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তাদের আইনগত সুরক্ষার নিশ্চয়তা কে দেবে!
সৌদি আরবে এ এক গোলমেলে আইন। অপরাধ প্রকাশ্যে আনা মানুষটাকেই অপরাধ বানিয়ে দিল দেশের আইন। সৌদি আরবের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না করে উল্টো আদালত তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ এনে বলছে এজন্যে কঠিন শাস্তি হতে পারে তার। কিন্তু কিইবা করার ছিল ওই সৌদি নারীর। তার স্বামী বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে বেশ কয়েকমাস ধরে জোরপূর্বক ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যাপারটা চোখ এড়ায়নি স্ত্রীর। কিন্তু স্বামী বারবারই প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রী তখন বাজার থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা কিনে এনে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখে দেন।
সেই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল স্ত্রী- বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্বামী সেই পরিচারিকার ওপর কিভাবে চড়াও হচ্ছেন, উপগত হচ্ছেন। সিসিটিভ ফুটেজে দেখা গেল কীভাবে স্বামী পরিচারিকা ঘরের ভিতর ডেকে আনার পর উত্তেজিত হয়ে অপকর্ম করছেন। স্বামীর অপরাধের সেই ভিডিও ইউ টিউবে আপলোড করে স্ত্রী। কারণ তার কাছে অন্য কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু সৌদি আইন দারুণ গোলমেলে। অশ্লীল ভিডিও আপলোডের দায়ে গ্রেপ্তার করা হল স্ত্রী-কে। সঙ্গে ৮৭ হাজার পাউন্ড জরিমানা। জেলে স্ত্রী-কে দেখতে গেল স্বামী। সৌদি আরবের বিশিষ্ট আইনজীবি মাজিদ কারুব বলছেন, না জানিয়ে স্বামীর গোপন দৃশ্য ধারণ করে তা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায় সৌদি আইনে কঠিন শাস্তি হবে তার স্ত্রীর। টুইটার ও ফেসবুকে ওই দৃশ্য পোস্ট করার পর ১২ ঘন্টায় ২৫ হাজার মানুষ তা দেখেন।
স্বামীর পরকীয়া মুহূর্ত গোপন ক্যামেরায় বন্দি করে হাজতবাসের আশঙ্কা এখন স্ত্রী’র! তার অপরাধ পরিচারিকার সঙ্গে স্বামীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা। এই অপরাধেই স্বামীকে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে সৌদি আরবের ওই মহিলার বিরুদ্ধে। সৌদি আইন অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত হলে, ওই মহিলাকে এক বছরের জেল ও ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হতে পারে। এমন দাবি করছেন মহিলার স্বামীর আইনজীবীদেরও।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন